যমুনায় বিলীন চৌহালীর এনায়েতপুর ২৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

  • আপডেট টাইম : সোমবার, ৬ সেপ্টেম্বর, ২০২১
  • ২২৯ দেখেছেন

যমুনায় বিলীন চৌহালীর এনায়েতপুর ২৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান

সোহেল রানা, চৌহালী (সিরাজগঞ্জ) প্রতিনিধিঃ

সিরাজগঞ্জের চৌহালীতে এনায়েতপুর যমুনা নদীর ক্রমাগত ভাঙনে গত ২ বছরে প্রায় ২৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এর মধ্যে গত দুই সপ্তাহে ৫টি প্রাথমিক বিদ্যালয় গ্রাস করেছে যমুনা নদী।

আগামী ১২ সেপ্টেম্বর খুলছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান- এমন ঘোষণার পর থেকে অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ঝোপঝাড়, বাথরুমসহ আসবাবপত্রের ধুলো পরিষ্কার করা হচ্ছে। তবে ২৩টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে বন্যার পানি প্রবেশ করায় চিন্তিত শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

এ বছর বিলীন হয়ে যাওয়া স্কুলগুলোতে পাঠদান নিয়েও হিমশিম খেতে হবে শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের- এমন আশঙ্কা সংশ্লিষ্টদের।

চৌহালী উপজেলা শিক্ষা অফিস ও প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, ৭টি ইউনিয়নে ১২৮টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কলেজ ৫টি, কারিগরি কলেজ ৩টি, ফাজিল মাদ্রাসা ৩টি, আলিম মাদ্রাসা ১টি, দাখিল মাদ্রাসা ১৫টি, হাইস্কুল ১৮টি ও নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে ২টি। এতে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রায় ২৬ হাজার ও মাধ্যমিকের প্রায় ২৪ হাজার ৫০০ শিক্ষার্থী রয়েছে।

করোনার কারণে প্রায় দেড় বছর ধরে স্কুল বন্ধ থাকায় চরাঞ্চলের অধিকাংশ প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ঝরে পড়ছে। অনেকেই বাল্যবিয়ের পিঁড়িতে বসে সংসার গড়েছে। কেউ কেউ কর্মের তাগিদে অন্যত্র চলে গেছে।

এদিকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় নষ্ট হচ্ছে শিক্ষার্থীদের বসার বেঞ্চ, শ্রেণিকক্ষের দরজা-জানালায় মাকড়শা বাসা বেঁধেছে। পড়েছে বালুর আস্তরণ। এজন্য কিছু প্রতিষ্ঠানে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ এখনো নিশ্চিত হয়নি।

এছাড়া বন্যার পানি প্রবেশ করেছে ৭৮ নং দেওয়াতলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মুরাদপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পাকুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, হাপানিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, কোদালিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, চরমুরাদারপুরসহ প্রায় ২৩টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। বিশেষ করে এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরু থেকেই যমুনা নদী ভয়ংকর মূর্তি ধারণ করে ক্রমাগতভাবে বসত-বাড়ি, ফসলি জমি, দোকানপাট, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন স্থাপনা বিলীন হয়।

এর সঙ্গে উমারপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বাউসা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ইউসুফ শাহী সলঙ্গী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বিলঝলহর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ধুপুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নদীতে বিলীন হয়ে যায়।

এদিকে গত দুই বছরে রেহাইমৌশা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারবয়লা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, আরমাশুকা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ব্রিদাশুরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়সহ প্রায় ২৫টি স্কুল যমুনাগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। বর্তমানে প্রায় ৭ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নদী ভাঙনের মুখে পড়েছে। নদীতে বিলীন হয়ে যাওয়া অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর নতুন স্থানে পাঠদান কক্ষ নির্মাণ হয়েছে।

তবে এ বছর বিলীন হয়ে যাওয়া স্কুলগুলোর টিন-কাঠসহ আসবাবপত্রের ঠাঁই হয়েছে কারও বাড়ির উঠান, খোলা মাঠে অথবা ওয়াপদা বাঁধে। এ কারণে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশে নিয়ে শঙ্কায় অভিভাবকরা।

এ ব্যাপারে স্থানীয় সচেতন মহল মনে করেন, করোনায় বন্ধ থাকা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরে ও বাইরে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন নিশ্চিত করা, প্রতিদিনই শিক্ষক, শিক্ষার্থী, স্টাফসহ সংশ্লিষ্টদের স্বাস্থ্য সুরক্ষাসহ স্কুলবিহীন শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে ফিরিয়ে আনাই এখন বড় চ্যালেঞ্জ।

এক্ষেত্রে চৌহালী উপজেলাটি রাশজাহী বিভাগের মধ্যে একমাত্র দুর্গম উপজেলা হওয়ায় চ্যালেঞ্জ একটু বেশি।

এ বিষয়ে উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জাহাঙ্গীর ফিরোজ জানান, নদীতে বিলীন হওয়া স্কুলগুলো অন্যের বাড়ি অথবা খোলাস্থানে ঘর তুলে পাঠদানের ব্যবস্থা চালু রাখা হয়েছে। আর স্কুল খোলার বিষয়ে ঘোষণা আসার পর থেকে প্রতিটি বিদ্যালয়ে পাঠদানের জন্য উপযুক্ত করা হচ্ছে।

তবে চৌহালী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) আনিছুর রহমান বলেন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ক্লাস চালুর জন্য সবরকম প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। বন্যাকবলিত ও ভাঙনে বিলীন বিদ্যালয়গুলোতে পাঠদানে বিকল্প ব্যবস্থা করা হবে।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি