চট্টগ্রাম নগরীর ১৭নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর’র শুভেচ্ছা কার্ডের রোসানলে স্থানীয়রা

  • আপডেট টাইম : রবিবার, ৮ আগস্ট, ২০২১
  • ৩৬৭ দেখেছেন
ছবিঃ যমুনা নিউজ ২৪

চট্টগ্রাম প্রতিনিধিঃ

  • বন্দর নগরী চট্টগ্রাম ১৭ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলরের দেওয়া শুভেচ্ছা কার্ডের রোসানলে সাধারন জনগন।

নগরীর ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ডের এক বাসিন্দা জানান গতকাল শুক্রবার সকালে কাউন্সিলরের কার্যালয়ে করোনার টিকা নিতে নিবন্ধন করেছিলেন ফরম পূরণের মাধ্যমে। নিবন্ধন শেষে তাকে বলা হয় শনিবার (৭ আগস্ট) সৈয়দ শাহ রোডের আরবান হেলথ কেয়ার সেন্টারে টিকা নিতে আসার জন্য। সকাল ১০টায় ওই কেন্দ্রে উপস্থিত হলে তার কাছে শুভেচ্ছা কার্ড আছে কিনা জানতে চাওয়া হয়। শুভেচ্ছা কার্ড থাকলে টি নেওয়ার
জন্য লাইনে দাঁড়াতে পারবেন, অন্যথায় চলে যেতে হবে এমন শর্ত শুনে বাসার দিকে পা বাড়ান রোকেয়া বেগম।

তিনি সাংবাদিকদের বলেন আমি গতকাল যখন ভোটার আইডি কার্ড নিয়ে এসেছিলাম তখন বারবার জিজ্ঞেস করেছি আর কিছু লাগবে কি না। তারা বলেছিলেন না লাগবে না। কিন্তু আজকে টিকা নিতে আসার পর তারা আমার কাছে শুভেচ্ছা কার্ড খুঁজে। এমন কোনো কার্ডই আমাকে দেওয়া হয়নি তাহলে আমি পাবো কোথা থেকে। গতকাল ভেবেছিলাম হয়তো টিকাটা দিতে পারবো। কিন্তু তা আর হলো না। বাসায় চলে যাচ্ছি তিনি আরো জানান আমি যখন লাইনে দাড়িয়েছি তখন কয়েকজন যুবক ছেলে এসে বলতে লাগলো কাউন্সিলর শহিদ ভাইয়ের অর্ডার যাদের শুভেচ্ছা কার্ড নেই তারা স্বসন্মানে নিজ নিজ বাসায় চলে যান আমরা চায় না কেউ আমাদের হাতে অপমানিত হোক তাই আমি মান স্বন্মানের ভয়ে বাসায় চলে যাচ্ছি

একই ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কার্যালয়ে টিকা নিতে এসে স্বেচ্ছাসেবকদের সঙ্গে বাকবিতণ্ডা করতে দেখা যায় এক যুবককে। ওই যুবক আমাদের প্রতিনিধিকে বলেন ৩ ঘন্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকার পর টিকা নিতে গেলে শহিদ কমিশনারের ছেলেরা বলে কাউন্সিলরের শুভেচ্ছা টোকেন ছাড়া কেউ নাকি টিকা নিতে পারবে না। অথচ আগের দিনের নিবন্ধনের পর আমাকে দেওয়া রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম আর ভোটার আইডি কার্ড আমার কাছে ছিল। যদি এভাবে আমাদের ফিরিয়ে দেওয়া হয় তাহলে লাইনে দাঁড়িয়ে নিবন্ধন করতে বললো কেন?

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ১৭নং পশ্চিম বাকলিয়া ওয়ার্ড কাউন্সিলর মোহাম্মদ শহিদুল আলমকে কয়েকবার মুটো ফোনে ফোন করলে কোন সাড়া পাওয়া যায়নি। আমাদের প্রতিনিধি রাত ০৯ ঘটিকার সময় শহিদ কমিশনারের মুটো ফোনে পুনরায় কয়েকবার চেষ্টা করলে তিনি ফোন ধরেন এবং তার কাছে এই বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি শুভেচ্ছা কার্ড এর বিষয় টা সরাসরি অস্বীকার করে বলেন কার্ড এর বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।

রেজিষ্ট্রেশন ফর্ম পূরণ করেও টিকা নিতে না পারার অভিযোগ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এসব মিথ্যা অভিযোগ। কতজন কত অভিযোগ করবে।

এদিকে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে পঞ্চাশের বেশি বয়সী জনগোষ্ঠী, নারী ও শারীরিক প্রতিবন্ধীদের অগ্রাধিকার ভিত্তিতে টিকা দেওয়ার কথা থাকলেও নগরের ১৭ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলরের সরবরাহ করা শুভেচ্ছা কার্ড ছাড়া করোনার টিকা মিলেনি বলে অভিযোগ আছে। ভোর থেকে লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কাউন্সিলরের দেওয়া শুভেচ্ছা কার্ড না থাকায় হতাশ হয়ে ফিরে গেছেন অসংখ্য সাধারণ জনগন

১৬নং চকবাজার ওয়ার্ড কার্যালয়ে টিকা নিতে আসা একজন ব্যক্তি বলেন, টিকা নিতে এসে নিজের চোখে দেখলাম কী পরিমাণ অরাজকতা হচ্ছে। স্বেচ্ছাসেবকদের পরিচিতদের একের পর এক বুথে ঢুকিয়ে টিকা দেওয়া হচ্ছে। অন্যদিকে সাধারণ মানুষ বাইরে দাঁড়িয়ে আছে। নিয়ম না মেনে এভাবে সরকারের মহৎ কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা হয়

চট্টগ্রাম সিটিতে মডার্নার টিকা দেওয়ার জন্য ৪১টি ওয়ার্ডের ১২৩টি কেন্দ্র নির্ধারণ করা হয়। সরেজমিন নগরের ১৬ নং চকবাজার, ১৭ নং পশ্চিম বাকলিয়া, ২৯ নং পশ্চিম মাদারবাড়ী, ৩৭ নং উত্তর মধ্যম হালিশহর ওয়ার্ড ঘুরে দেখা যায় ওয়ার্ড কাউন্সলরের নিজশ্ব কর্মীদের দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন টিকাদান কার্যক্রম। এসব ওয়ার্ডে কর্মীদের সঙ্গে টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে বাকবিতণ্ডায় লিপ্ত হতেও দেখা যায়।

গণটিকাদান কর্মসূচির ‌প্রথম দিন চট্টগ্রাম সিটিতে এভাবে স্বজনপ্রীতিসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, গণটিকাদান কার্যক্রমে সরকারি নির্দেশনা অমান্য করে নিজেদের অনুসারী ও পছন্দের লোকজনকে গত দু’দিন আগে থেকে শুভেচ্ছা কার্ড বিতরণ করেছেন বেশিরভাগ ওয়ার্ডের কাউন্সিলর। ফলে নিবন্ধন করেও সকাল থেকে ওয়ার্ডের টিকাকেন্দ্র থেকে টিকা না নিয়ে, ক্ষেত্রবিশেষে লাঞ্চিত হয়েই ফিরে যেতে হয়েছে টিকা নিতে আসা সাধারণ মানুষকে।

এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেইসবুকে অনেকেই টিকা নিতে গিয়ে নিজের তিক্ত অভিজ্ঞতা ও ভোগান্তির কথা শেয়ার করেছেন।

এদিকে ১৭ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা চট্টগ্রাম সরকারী সিটি কলেজের সাবেক ভি পি মাসুদ করিম টিটু লিখেছেন, ‘নিবন্ধন=>ম্যাসেজ=>টিকা গ্রহণ একটা সুন্দর প্রক্রিয়ায় ছিল। সময় লাগলেও সিস্টেমেটিক ওয়েতে হচ্ছিল। চেয়ারওয়ালাদের চামচা আর কাছের মানুষ দুই-চারশ’জনকে টিকা দেয়ার প্রক্রিয়াকে গণটিকা কর্মসূচি নাম দিয়ে আওয়ামী লীগকে আমজনতার গালিগালাজ শােনানাে, মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দেশপ্রেম এবং গণমুখী কার্যক্রমকে প্রশ্নবিদ্ধ করা ছাড়া আর কিছুই না।

নিউজটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

Your email address will not be published.

এ জাতীয় আরো সংবাদ
এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা অনুমতি ছাড়া নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা সম্পূর্ণ বেআইনি