করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে দ্বিতীয় এই হজও অনুষ্ঠিত হচ্ছে সীমিত পরিসরে। সোমবার আরাফার ময়দানে অবস্থান করেই হজের মূল আনুষ্ঠানিকতা সারেন হাজিরা। সৌদি আরবে অবস্থান করা যেসব মুসলিম করোনাভাইরাসের টিকা নিয়েছেন, তাদের মধ্যে থেকে ৬০ হাজার জনকে এবার হজ করতে পারছেন। হজের আনুষ্ঠানিকতা মূলত শুরু হয়েছে রোববার; এদিন অংশগ্রহণকারীরা স্বাস্থ্যবিধি মেনে মিনায় অবস্থান করে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায় করেছেন।
এরপর হজের মূল আনুষ্ঠানিকতার জন্য সোমবার ফজরের নামাজ পড়ে প্রায় ছয় কিলোমিটার দূরে বিদায় হজের স্মৃতিজড়িত আরাফাতের ময়দানের উদ্দেশ্যে রওনা হন তারা। সূর্যাস্ত পর্যন্ত তারা সেখানে অবস্থান করে হজের খুতবা শুনেন এবং জোহর ও আসরের নামাজ পড়েন।
‘লাব্বাইক, আল্লাহুম্মা লাব্বাইক। লাব্বাইক, লা শারিকা লাকা লাব্বাইক। ইন্নাল হামদা, ওয়াননি’মাতা, লাকা ওয়ালমুলক, লা শারিকা লাক…।’ এমন মধুর ধ্বনি-প্রতিধ্বনিতে পবিত্র আরাফাতের পাহাড়ঘেরা ময়দান ছাপিয়ে আকাশ-বাতাস মুখর ও প্রকম্পিত আজ।
সৌদি আরবের স্থানীয় সময় দুপুর ১২টা ২০ মিনিটে সালাম দিয়ে হজের খুতবা শুরু করেন দেশটির বিশিষ্ট আলেম, সর্বোচ্চ ওলামা পরিষদ এবং গবেষণা-মুফতি বোর্ডের সদস্য, মক্কার মসজিদুল হারামের ইমাম ও শায়খ ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। খুতবার শুরুতে তিনি মহান আল্লাহ তায়ালার প্রশংসা করেন ও মহানবী হজরত মুহাম্মদ রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সালামের ওপর দুরুদ পড়েন। এবারের হজে অংশগ্রহণকারী উপস্থিত হাজিদের সুস্থতা চেয়ে দোয়া করেন তিনি।
হজের খুতবায় শায়খ বালিলা মুসলিম উম্মাহকে উদ্দেশ্য করে বলেন, উম্মতে মুসলিমদের উচিত পরস্পরের মধ্যে সৌহার্দ্য ও সদ্ভাব বজায় রাখা। তোমরা আল্লাহকে ভয় করো। নিজের নফসকে হেফাজত করো। আল্লাহর ওয়াস্তে তোমার প্রতিশ্রুতি পূরণ করো।
২৫ মিনিট ব্যাপী খুতবার শেষাংশে সৌদি সরকারের জন্য দোয়া করেন ড. বান্দার বিন আবদুল আজিজ বালিলা। সেইসঙ্গে বিশ্বে শান্তি ও সমৃদ্ধি কামনা করেন। রোগ মুক্তির জন্য দোয়া করেন। করোনাকে মহামারি উল্লেখ করে এর থেকে বিশ্ববাসীর হেফাজতের জন্য দোয়া করেন। সর্বাবস্থায় আল্লাহর দরবারে যাবতীয় সমস্যার জন্য বেশি বেশি দোয়া করার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
ইসলামী রীতি অনুযায়ী, জিলহজ মাসের নবম দিনটি আরাফাতের ময়দানে অবস্থান করে ইবাদতে কাটানোই হলো হজ।
আরাফাত থেকে মিনায় ফেরার পথে সন্ধ্যায় মুযদালিফায় মাগরিব ও এশার নামাজ পড়েন মুসলমানরা। সেখানে রাতে থাকার সময় তারা পাথর সংগ্রহ করেন, যা মিনার জামারায় শয়তানের উদ্দেশ্যে ছোড়া হয়।
মঙ্গলবার সকালে মিনায় ফিরে সেই পাথর তারা প্রতীকী শয়তানকে লক্ষ্য করে ছুঁড়বেন। এরপর কোরবানি দিয়ে ইহরাম ত্যাগ করবেন এবং সবশেষে কাবা শরিফকে বিদায়ী তাওয়াফের মধ্যে দিয়ে শেষ হবে হজের আনুষ্ঠানিকতা।
হজ মুসলমানদের জন্য একটি আবশ্যকীয় ইবাদত বা ধর্মীয় উপাসনা। এটি ইসলাম ধর্মের পাঁচটি স্তম্ভের একটি। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম প্রত্যেক মুসলমান নর-নারীর জন্য জীবনে একবার হজ সম্পাদন করা ফরজ বা আবশ্যক বলে গণ্য করা হয়।
পরিসংখ্যান অনুযায়ী গত বছর ২০২০ সালে মাত্র ১০ হাজার সৌদি হজে অংশ নিয়েছিলেন এবং হজের পর কোভিড ছড়িয়ে পড়ার বড় কোনো ঘটনা ঘটেনি। মহামারিতে সৌদি আরবে পাঁচ লাখের বেশি মানুষের করোনা সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে এবং দেশটিতে মারা গেছে আট হাজারের বেশি লোক।
Leave a Reply